বিএম আলাউদ্দীন আশাশুনি ব্যুরো:
আশাশুনি উপজেলার বড়দল আফতাব উদ্দীন কলেজিয়েট স্কুলের ৯ শিক্ষক ক্লাশ বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আশাশুনিতে গমন করায় কমিটির সদস্য, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিকারের দাবী জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের শৃংখলা বজায় রাখতে, সুষ্ঠুভাবে ক্লাশ পরিচালনা ও বিধিমালা বাস্তবায়নে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানানো হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাবলুর রহমান জানান, বিদ্যালয়টি প্রতিদিন সকাল ১০ টায় বসে থাকে। বুধবার যথারীতি ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-কর্মচারীরা স্কুলে আসেন। কিন্তু প্রভাষক মোহাম্মদ আলী ও হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে শিক্ষক বলাই কৃষ্ণ, রবিউল ইসলাম, আব্দুস সেলিম, এনামুল হক, নিহার রঞ্জন গোলদার, নিমাই চন্দ্র সানা, শিবপদ সরকার আমাকে, গভর্নিং বডির সদস্যবৃন্দ কাউকে কিছু না জানিয়ে ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম ও ১০ম শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থীকে ক্লাশ থেকে বের করে নিয়ে ক্লাশ বন্ধ করে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যান। এসময় অনেক শিক্ষার্থীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হয় বলে তিনি দাবী করেন। ফলে স্বাভাবিক ক্লাশ পরিচালনা বন্ধ হয়ে যায়। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদেরকে কেন ক্লাশ বন্ধ করে বাইরে নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠেন।
প্রতিষ্ঠানের দাতা সদস্য ও প্রতিষ্ঠাতার বড় পুত্র রফিকুল ইসলাম সানা জানান, আমি প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম, কমিটির বিনা অনুমতিতে কিভাবে ক্লাশ বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো ভাবতে পারছিনা। তাদের কোন অভিযোগ থাকলে জানালে কমিটি ও শিক্ষকরা বসে সমাধান করা যায়। নিয়ম কানুন অবমাননা করা যায়না। প্রতিষ্ঠানটি ২/৩ জন শিক্ষক ক্ষতিগ্রস্থ করে যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে চলুক আমরা সেটাই চাই।
শিক্ষক প্রতিনিধি মানিক চন্দ্র মন্ডল বলেন, সবার কাছে আহবান প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময় ও নিয়মিত ভাবে চলুক, কোন প্রকার রাজনীতি না করি। অধ্যক্ষের চেয়ারে যিনি বসবেন আমরা তাকেই মেনে নেব, সম্মান করবো। বিশৃংখলা সৃষ্টি হোক তা চাইনা।
পরীক্ষার্থী নাইমুল হাসান, মিথন শিকারী ও ১ম বর্ষের ছাত্র সজীব সানা প্রমুখ শিক্ষার্থীরা জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমাদেরকে কোন টাকা ছাড়াই টিউশনি করে আসছেন। প্রতিষ্ঠানে অনেক উন্নতি হয়েছে। ইতিপূর্বে কিছু শিক্ষক ক্লাশ বর্জন করলে ছাত্ররা প্রতিবাদে মানববন্ধন করে। আজ আবার কতিপয় শিক্ষক ক্লাশ বন্ধ করে কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে বাইরে গেছেন। যারা যেতে চায়নি, শিক্ষক মোহাম্মদ আলী, এনামুল হক ও হাফিজুর স্যার হুমকী দিয়ে বলেন, আমরা দল করি, যা বলব তাই হবে। অভিভাবক কাজল সানা বলেন, বাজারে আমার ব্যবসা আছে। সেখানে বসে জানতে পারি কয়েকজন শিক্ষক ক্লাস বন্ধ করে ছাত্রদের নিয়ে বাইরে যাচ্ছেন। দ্রুত স্কুলে গিয়ে জানলাম অনেক ছাত্র যেতে চাচ্ছিলনা, কিন্তু স্যারেরা দলের দোহাই দিয়ে তাদেরকে যেতে বাধ্য করেন। তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন অভিভাবকদের বিনানুমতিতে ক্লাশ বন্ধ করে কেন আশাশুনিতে নিয়ে যাওয়া হল? আমরা এর প্রতিকার চাই।
অভিযুক্ত শিক্ষক হাফিজুল ইসলাম, প্রভাষক মোহাম্মদ আলী সাংবাদিকদের জানান, প্রতিষ্ঠানের বৈষম্য নিরসন ও অবৈধ নিয়োগ বন্ধে আমরা বিভিন্ন মন্ত্রনালয়, শিক্ষা বোর্ড, জেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রশাসক, মেজর মারুফ ও ইউএনও বরাবর পৃথক পৃথক অভিযোগ দাখিল করে প্রতিকার প্রার্থনা করেছি। এখনো কোন প্রতিকার পাইনি। কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেবেন কথা হলেও বর্তমানে সভাপতি পরিবর্তন হয়ে ইউএনও মহোদয় সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। তাই আমরা ইউএনও সাহেবের সাথে মোবাইলে কথা বলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা সভাপতির সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম। অফিসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, ফাইল এর হদিস নেই, আর্থিক অনিয়মসহ নানাবিধ অনিয়মের কথা ইউএনও সাহেবকে জানিয়ে এসেছি। ক্লাশ বন্ধ করে ক্লাশ টাইমে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া ঠিক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষকরা জানান, ইউএনও তথা নতুন সভাপতি আমাদেরকে যেতে বলায় আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে গিয়েছিলাম।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাবলুর রহমান জানান, কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। সাবেক অধ্যক্ষ অন্যত্র চলে যাওয়ায় পদটি শূন্য ছিল।
প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে নিয়ম মেনে কমিটি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি সভাপতি মহোদয়ের নিকট থেকে দায়িত্বভার গ্রহন করি। পরে জানতে পারলাম কিছু জরুরী কাগজপত্র দুদকে জমা আছে, কিছু কাগজপত্র অফিসে নেই। তখন আমি কমিটির মিটিংয়ে উত্থাপন করি এবং এব্যাপারে থানায় জিডি করা হয়েছে। আমি নিয়ম মেনে দায়িত্ব পালন করে আসতেছি। অফিস সহকারী দীনেশ চন্দ্র সরকার ও মৃনাল কান্তি সানার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের হিসাব নিকাশ সঠিক ভাবে লিপিবদ্ধ করা রয়েছে।